ফাইবার আপওয়ার্ক, কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করা উচিত? নতুনদের জন্য কোনটি সেরা

ঘরে বসে আয় বা ফ্রিল্যান্সিং জগতের বহুল জনপ্রিয় নাম ফাইভার এবং আপওয়ার্ক।”ঘরে বসে আয় “বাক্যটি দিন দিন অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরুনদের মাঝে।ইণ্টারনেটে এমন অনেক মার্কেটপ্লেস আছে যারা ঘরে বসে আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে।এদের মধ্যে টপ রেটের মার্কেট প্লেস হচ্ছে ফাইভার এবং আপওয়ার্ক।

নিজেদের সাইটের উন্নত অপারেটিং সিস্টেম এবং অধিক ভাল সার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে এই দুটি সাইট তাদের অবস্থান এততাই মজবুত করে তুলেছে যে বেশির ভাগ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং বলতে ফইভার এবং আপওয়ার্ক কেই বোঝে তাই “ফাইভার বনাম আপওয়ার্ক,নতুনদের জন্য কোনটি বেশি সুবিধাজনক?” এটি একটি সার্বজনিন প্রশ্ন। কিন্ত এই দুটি ছাড়াও আরো অনেক ,মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেমনঃ: freelancer.com, fiverr.com, upwork.com, peopleperhour.com, 99designs.com, microworkers.com ইত্যাদি।

অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভার এবং আপওয়ার্ক, কীরূপ সেবা প্রদান করে এবং কোনটি নতুনদের জন্য বেশি সুবিধাজনক জানার আগে মার্কেটপ্লেস কি তা  জানা প্রয়োজোনঃ

এই পোস্টের সার সংক্ষেপ

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কি?

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস অনলাইনে এমন ওয়েবসাইট যেখানে ক্লায়েন্ট/বায়াররা তাদের কাজের জন্য সঠিক ও দক্ষ লোকের খোজে আসে এবং ফ্রিল্যান্সার/সেলাররা তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে উপার্জন করতে পারে। এখানে ক্লায়েন্ট/বায়াররা তাদের পছন্দের লোক বাছাই করার সুযোগ পায়।

এসব সাইটগুলোকেই মার্কেটপ্লেস বলে। ক্লায়েন্ট/বায়ারগন মুলত মার্কেটপ্লেসে পেমেন্ট করেন যা পরবর্তীতে সেলারের একাউন্টে জমা হয়| এতে করে ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টরের আর্থিকভাবে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এই ডলারগুলো উঠানো যায়। এসব মার্কেটপ্লেসে সেলারদের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের রেটিং দেওয়া হয়। রেটিং ক্লায়েন্টদের তাদের কাজের জন্য যোগ্য ফ্রিল্যান্সার বাছাই করতে সাহায্য করে।

ফাইবার মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে বিস্তারিত

ফাইভার এর কমিশনঃ  

ফিল্যান্সার এবং গ্রাহক – উভয়কেই চার্জ করে ফাইভার। গিগ কেনার আগে এডভান্স হিসেবে ফাইভারকে একটি ফি প্রদান করতে হয় বায়ারদের। ৪০ ডলারের থেকে কম মুল্যের সেবাগুলোর জন্য ২ ডলার এবং ৪০ ডলারে বেশি মূল্যের সেবাগুলোর জন্য ৫% হারে ফাইভারকে কমিশন দিতে হয়।

ফ্রিল্যান্সারগণের প্রতি প্রজেক্টের ৮০% অর্থ ফ্রিল্যান্সারের একাউন্টে যোগ হয় বাকি ২০% কমিশন হিসাবে কেটে নেওয়া হয়। ফাইভার নতুনদের জন্য বেশি সুবিধাজনক মনে করা হয়। কারন এখানে বায়ারদের পোস্ট করা জবে বিড করতে ফ্রিল্যান্সারদের কোন খরচ করতে হয়না।এটি খুবই ভাল একটি সুযোগ নতুনদের জন্য।  

ফাইভারে প্রি-স্ক্যানিং সুবিধাসমূহঃ

ফাইভারে ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের টেস্টের ব্যবস্থা আছে যা ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতার অফিসিয়াল সার্টিফিকেট হিসেবে কাজ করে। বায়ারদের সেলারের দক্ষতা নিয়ে দ্বিধা দূর করে।

ফাইভারে রেটিং সিস্টেমঃ

ফাইভারে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের ধরন দক্ষতা কমিউনিকেশন এর উপর ভিত্তি করে বায়ারগণ রেটিং দেন। যে ফ্রিল্যান্সার বায়ারকে কাজের মাধ্যমে যতটা খুশি করতে পারেন, সে তত স্টার পান, এখানে সর্বোচ্চ ৫স্টার দেওয়া যায়।

ফাইভারের ট্র‍্যাকিং অ্যাপসঃ

ফাইভারের কোনো ট্র্যাকিং অ্যাপ না থাকলেও মোবাইল অ্যাপ আছে, যেটা দিয়ে জব সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ এবং মেসেজ আদানপ্রদান করা যায়।

ফাইভারে পেমেন্ট উত্তোলনের উপায়ঃ 

ফাইবার থেকে পেওনিয়ার, পেপাল এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা যায়। তবে বাংলাদেশে পেপাল সাপোর্ট না করার জন্য, সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে পেওনিয়ার। এবং পেওনিয়ারে সর্বনিম্ন 20 ডলারের উত্তোলন করা যায়। পেওনিয়ার হচ্ছে ইন্টার্নেশনালি অনলাইন ব্যাংকিং । আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে পেওনিয়ার একাউন্ট করতে পারবেন।

ফাইভারে পেইড মেম্বারশিপ বা বিশেষ একাউন্ট সুবিধাঃ

ফাইভারে টাকা দিয়ে পেইড মেম্বারশিপ নেওয়ার ঝামেলা নেই।তাই যে কেউ চাইলেই তাদের একাউন্ট কোনো মাসিক ফি ব্যতীত বিনামূল্যে চালাতে পারেন এবং ফাইভারের সুযোগসুবিধা নিতে পারেন ফ্রীতে। তবে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার  ফাইভার প্রো মেম্বার হতে পারেন,যার ফলে সে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন।এই প্রো গ্রাহকদের মাসিক ফি দিতে হয়না এটিও একদম ফ্রী।

ফাইভারে সাপোর্টিং সার্ভিসঃ  

ফাইভারে ফ্রিল্যান্সার এবং বায়ারদের কোন সমস্যা হলে নিজেদের মধ্যে সমাধান করার চেস্টা করতে হয় বা সেলার চাইলে কন্ট্রাক্ট ক্যান্সেল করে দিতে পারেন। তা না হলে প্রতিনিধি এ ব্যাপারটা দেখেন। ফাইভারে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যাপারটাকে আপওয়ার্কের মত সুন্দর ভাবে পর্যালোচনা করা হয়না।

আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে বিস্তারিত

আপওয়ার্ক যেভাবে কাজ করেঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেস হচ্ছে আপওয়ার্ক। এখানে সেলারগণ বা ফ্রিল্যান্সারগণ প্রফাইলে তাদের কাজ,অভিজ্ঞতা দক্ষতা তুলে ধরেন। ক্লায়েন্টগণ তাদের প্রয়োজনীয় কাজের বর্ননা দিয়ে জব পোস্ট করলে ফ্রিল্যান্সারগণ তাদের প্রোফাইলে যুক্ত কাজের তালিকা থেকে কাজ অফার করেন। অনেকগুলো অফার থেকে সেলারগণ পছন্দের বায়ারকে নিযুক্ত করে চুক্তিবদ্ধ হন।

ক্লায়েন্ট চাইলে জবপোস্ট করার সময় তাদের পছন্দের  ফ্রিল্যান্সারকে কাজের জন্য ইনভাইট করতে পারেন। সার্চবারের মাধ্যমে দক্ষ ফিল্যান্সার খোঁজা যাবে আপওয়ার্কেও। একজন ফ্রিল্যান্সার ঘন্টামাফিক কাজ করেন আপওয়ার্কে ,তাদের আপওয়ার্কে মোট ব্যায়কৃত সময় ও কাজের ধরন ক্লায়েন্টগন তাদের একাউন্ট থেকে জানতে পারেন।

ফাইভার এবং আপওয়ার্ক উভয় সাইটই কমিশনের মাধ্যমে আয় করে, এরা একটি নির্দিস্ট পরিমাণ অর্থ কেটে নেয় চুক্তি থেকে। এ কমিশনের এর মধ্যে কিছু পার্থক্য থালকেও উভয় প্ল্যাটফর্মই পেমেন্ট থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ ফি হিসেবে কেটে নেয়। 

আপওয়ার্কের কমিশনঃ  

আপওয়ার্কে একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রতিটি ক্লায়েন্টরের সাথে বিলিংয়ের চুক্তির উপর ভিত্তি করে একটি ফি নেওয়া হয়।

  • $ 0- $ 500                                        : 20%
  • $ 500.01- $ 10,000                          : 10%
  • $ 10,000.01 বা তার বেশি                : 5%

উদাহরণ: একটি নতুন বায়ারের সাথে $ 600 চুক্তি হয়েছে, এখানে কমিশন প্রথম $ 500 এর 20% এবং বাকি $ 100 এর 10% হবে।কমিশন  বাদে ফ্রিল্যান্সারের উপার্জন হবে $ 490।

প্রজেক্টে বায়ারের কাছে ফ্রিল্যান্সারের যে সার্ভিস রেট দেখানো হয় এর মধ্যেই আপওয়ার্ক এর ফি যুক্ত থাকে।আপওয়ার্ক এ ফ্রিল্যান্সারের টাকা খরচ করে পয়েন্ট কিনে সেগুলো দিয়ে জবে বিড করতে হয়, এছাড়াও প্রতিটি পেমেন্ট থেকে সর্বোচ্চ ২০% ফি কেটে রাখা হয় এ-কারণে নতুন ফ্রিলান্সারদের কিছুটা অসুবিধার মধ্যে পরতে হয়,বেশির ভাগ নতুন ফ্রিলান্সারগণ জবে বিড করার জন্য টাকা খরচ করতে চান না।   

আপওয়ার্কে প্রি-স্ক্যানিং সুবিধাসমূহঃ

আপওয়ার্কে স্কিল টেস্ট এর সুবিধা অতিতে থাকলেও তা বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের নিজের দক্ষতা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে এটি একটি অসুবিধা।

আপওয়ার্কে রেটিং সিস্টেমঃ

আপওয়ার্কের রেটিং সিস্টেম যা বায়ারকে ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য একটি প্রমাণপএ হিসেবে কাজ করে।

আপওয়ার্কের ট্র‍্যাকিং অ্যাপসঃ

আপওয়ার্কের মোবাইল অ্যাপস এবং কম্পিউটার ট্র্যাকিং সফটওয়্যার রয়েছে। যেহেতু আপওয়ার্কে ঘন্টা ভিত্তিক পেমেন্ট করা হয়। তাই কম্পিউটারে এই আপওয়ার্ক ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইনস্টল করার দরকার হয়।

এটা চালু করে কাজ করলে কিছুক্ষণ পরপর বায়ারের কাছে ফ্রিল্যান্সারের কাজের স্ক্রিনশট যায় এবং এটা সময়ের হিসেব রাখতে সাহায্য করে, যে অনুযায়ী সেলারকে পেমেন্ট করা হয় ।

আপওয়ার্কের পেমেন্ট উত্তোলনের উপায়ঃ

উভয় সাইটের পেমেন্ট সিস্টেম মোটামুটি একই রকম।এখানেও পেওনিয়ার  এবং বাংক একাউন্টও ব্যবহার করা যায় পেমেন্ট উত্তোলনের জন্য।

আপওয়ার্কের পেইড মেম্বারশিপ বা বিশেষ একাউন্ট সুবিধাঃ

আপওয়ার্কে পেইড মেম্বারশিপ প্ল্যান আছে যেগুলো সেলার এবং বায়ারদের বাড়তি সুবিধা প্রদান করে। যেমনঃ প্লাস মেম্বার জবে এপ্লাই করার জন্য ফ্রি কানেক্টস পান, বিড রেঞ্জ দেখতে পান যা সাধারণ সেলার পাননা। এছাড়াও  প্রোফাইলে বাড়তি সুবিধা পাবেন।

 আপওয়ার্কের সাপোর্টিং সার্ভিসঃ

আপওয়ার্কের সাপোর্টিং সার্ভিস ফাইভার অপেক্ষা তুলনামূলক ভালো। আপওয়ার্কে বায়ার সেলার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চমৎকার কিছু ব্যবস্থা আছে। বায়ার এবং সেলারের মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে আপওয়ার্কে কনট্রাক্ট হোল্ডে রাখা যায়।

ফ্রিল্যান্সার এবং বায়ারের মধ্যে কোনো ধরনের অসন্তোষ দেখা দিলে রিপোর্ট করে একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা যায়, যিনি সমস্যা সমধানে কাজ করেন।

ফাইভার বনাম আপওয়ার্ক, নতুনদের জন্য কোনটি সুবিধাজনক?

 নতুনদের জন্য ফাইভার এ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা তুলনামূলক সহজ কারন এখানে সহজে একাউন্ট খোলা যায় এবং জবপোস্টে বিড করতে কোন খরচ হয়না।

অপরদিকে আপওয়ার্কে একাউন্ট খোলা এবং এপ্রুভাল পাওয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ এবং অধিক জটিল প্রক্রিয়া, তবে দক্ষ সেলার হলে আপওয়ার্কে অনেক উচ্চমূল্য এবং দীর্ঘস্থায়ী জব পাওয়া যায়। এখানে বলে রাখা উচিত যেকোন ফ্রিল্যান্সার একইসাথে উভয় মার্কেটপ্লেসেই একাউন্ট রাখতে পারবেন।

ফাইভার এবং আপওয়ার্ক – দুইটি শীর্ষ অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এসব মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সার এবং বায়ার – উভয়ের জন্যই অফুরন্ত সম্ভবনা দ্বার উন্মোচিত করেছে, দক্ষতার সাথে কাজ করলে যেকোন মার্কেটপ্লেসেই উন্নতি করা সম্ভব।

আমার মতে নতুনদের ফাইভারে কাজ করে ভালোভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর আপওয়ার্কে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

1 thought on “ফাইবার আপওয়ার্ক, কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করা উচিত? নতুনদের জন্য কোনটি সেরা”

Leave a Comment